রাতভর বৃষ্টির পর চারপাশটা চকচক করছে। সকালের এই স্নিগ্ধতা শুধু সকালকেই মানায়। বড্ড আনমনা হয়ে যায় মন। কাঁটাখালি খালের ওদিক দিয়ে না যেয়ে ভালই করছি, ঘুরপথ হলেও এই অচেনা পথ-ই ভালো। চেনা পথ বুকে বড্ড জ্বালা ধরায় তবুও গ্রামটাতো আর এড়ানো গেলোনা। এই গ্রামটা না থাকলে কি এমন হত? আনমনে হাসি হয়তো সকাল বলেই। শেষমেশ জংলা জায়গাটায় যাবোনা যাবোনা করেও নিজেকে দেখি হিজল গাছগুলোর কাছে। বিরক্তিতে শব্দ করে থুতু ফেলি মুখে আবার থুতু জমা হয়; ভালো যন্ত্রণায় পড়া গেলো। পায়ের কাছ দিয়ে সরসর করে একটা সাপ চলে যায় নতুন পানির দিকে। আমিও ওকে পাত্তা দেইনা আর সাপটারো হয়তো মেলা কাজ। এদিক ওদিক তাকাই- কৌতুকের ছলে লাগানো গোলাপ গাছটা আজ দেখি কৌতুক হয়েই এক গুচ্ছ বুনো গোলাপ ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু বছরতো আর কম দীর্ঘনা। কিছু না ভেবেই ফুলগুলো তুলে নেই। কাঁটাগুলোকে আজ আর আমার পর লাগেনা আর কাঁটা ছাড়াই বা গোলাপ গাছ আমি কই পাবো? কৈশোর না জানালেও যৌবন ঠিক জানিয়ে দেয় বুকের ঘরে কিছু গোলাপ রাখলে তার পাশে কিছু কাঁটাও থাকে। নিয়তির পথ ধরে হেঁটে যাই। ঐতো বায়ে গাছপালায় ঘেরা অন্ধকার বাড়ি, ভাঙা সিঁড়ির পুকুর, গলা পানিতে এক হাসিমুখ যুবক, পাড়ে দাঁড়ানো ভেজা চুল দীপা…….। হঠাৎ এদিকে চোখ পড়ায় দুজনের এক মুহূর্তের একটু চোখাচোখি। এত দূর থেকে সে চোখের ভাষা বড্ড অচেনা মনে হয় এই দূরত্বের মত। মনে হয় কিছুই সত্যনা, সবকিছু হয়তো কোন গল্পকারের লেখা গল্প। মনে হয় মুঠোয় ধরা এই বুনো হলুদ গোলাপ, এক পলকের একটু দেখা, তারপর পিছু না ফিরে এই হেঁটে চলা হয়তো কোন অর্থহীন গল্পের অর্থহীন কিছু লাইন। যেতে যেতে বুকে বড় অস্থির লাগে তার মাঝে ঘুমটা হালকা হয়ে আসে টের পাই। ঘুমের ঘোরেই পাশ ফিরে শুই-মুখে একটু হাসি এনে দেয় পাগলামির স্বপ্ন। পিঠে বালু বালু লাগছে বলে মনে পড়ে বিছানা না ঝেড়েই ক্লান্তিতে শুয়ে পড়েছিলাম। এই ভোররাতে চিন্তাটা খুব একটা স্বস্তি এনে দেয়না বরং রাগ জন্মায় ক্লান্তিকর আনন্দহীন চাকরিটার প্রতি। বিরক্তিকর এলসিডি স্ক্রিন, দিনভর ডাটা এন্ট্রি-হিসাব,একঘেয়েমি শহুরে জীবন তারচেয়ে স্বপ্নের গ্রামের যুবক হয়েইতো বেশ ছিলাম। না হয় এক জীবন কাটিয়ে দিতাম দীপা নামের কোন মেয়ের ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে-বুকের ঘরে কিছু হলুদ গোলাপ রেখে। জানি এর কোন মানে নেই। ছোট্ট এক খুপরি ঘর, পাশে চামড়ার ফ্যাক্টরির পঁচা গন্ধ, রাতে ঘরময় উড়ে বেড়ানো তেলাপোকা, অন্ধকারের ভ্যাপসা গরমে বিছানার বালু, মাসভর সংগ্রামরত এক একটা দিন- এইসব নিয়েই আমি আর জীবন। বড় অল্প প্রতিদানেই জীবনের শুরুতে জানা হয়ে যায় দু দিনের না কামানো দাড়ি দেখে কেউ তাড়া দিবেনা শেভ করবার জন্য, সপ্তাহ-মাস অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও কারো পথ বেঁকে এই খুপরি ঘর পানে আসবেনা। এ ভীষণ পুরনো শহরের কাছে আমার মত মানুষের জন্য ভালোবাসা বা করুণার দু-এক ফোঁটাও অবশিষ্ট থাকেনা। এর জরাজীর্ণ চোখগুলো এর চেয়েও তুচ্ছতা-নিষ্ঠুরতা-তিক্ততা দেখে দেখে সয়ে যায় অবলীলায়। শতহোক আমরা ইতিহাস বয়ে বেড়ালেও শহরগুলোতো তার চিহ্ন ধরে রাখে। বড্ড অস্থির লাগে, ঘুম ভেঙে জেগে উঠি ভীষণ ক্ষুধায়। বেঁচে থাকার তাড়না জানিয়ে দেয় কী করতে হবে। অদ্ভুত স্বপ্নটাকে পাশে সরিয়ে একটু একটু করে খুঁড়ে চলি আমের ভিতরটা। শুষে চলি আরো গভীর থেকে গভীরের রস। বাইরে চকচকে আকাশ। বুনো গোলাপের পাপড়ি থেকে শেষ বৃষ্টির ফোঁটা টুকুও শুষে নেয় দিনের নতুন আলো। পুকুর পাড় থেকে ভেসে যায় এক যুবক-যুবতীর কণ্ঠ সকালের রোদে। এর মাঝে ঝুলে থাকা এক নিঃসঙ্গ আমের পোকায় কাটা অন্ধকারের গভীরে-তুচ্ছ এক কীটের বুকের অস্থিরতা তাকে কখনোই সকালের সে রূপ দেখায়না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন
লিখে মানুষের ভালোবাসা পেলে......কার ভালো না লেগে পারে? সবাইকে ধন্যবাদ তাদের ভালোবাসা আর মমতাটুকুর জন্য। খোরশেদুল ভাই, হ্যাঁ বড় হবে কিন্তু এ বছর হবে কিনা কে জানে!
খন্দকার নাহিদ হোসেন
রনীল ভাই, জীবনে দুইটা গল্পই লিখছিলাম। আর এটা সেই দুই নম্বর। লিখতে চাই কারন কবিতা আর ক'জন পড়ে হয়তো গল্প লিখলেই এ যুগে পাঠকের বেশি কাছাকাছি যাওয়া যায়! কিন্তু আমি যে রকম গল্প লিখতে চাই সে রকম গল্প কেউ পড়বে কিনা তাতে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে! ধন্যবাদ আর আমার চেষ্টা থাকবে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।